• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

সশস্ত্র পাহারার মধ্যেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে রহস্যজনক চুরি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ সংবাদটির পাঠক ৬ জন

‌আসাদুজ্জামান তপন : তালাবদ্ধ ঘর, বাইরে সশস্ত্র পাহারা; তার মধ্যেই বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গায়েব হয়ে গেছে কয়লার মান নির্ণয়ের একটি দামি যন্ত্র।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের ‘বোম্ব ক্যালরিমিটার’ যন্ত্রটি কয়লার অভাবে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরদিন ১৫ জানুয়ারি চুরি হলেও এখনও তা উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তথ্য জানিয়ে রামপাল থানার ওসি মোহাম্মদ সামসুদ্দিন এনবি নিউজকে  বলেন, “তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পরীক্ষার যন্ত্র চুরির ঘটনায় আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।”

তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) মো. অলিউল্লাহ বাদী হয়ে করা মামলার একটি এজাহারের কপি পাওয়া গেছে; তাতে দেখা যাচ্ছে আসামি হিসেবে কারও নাম নেই। বলা হয়েছে, ‘অজ্ঞাতনামা চোর/চোরেরা সকলের অজান্তে ঘটনাস্থল থেকে চুরি করিয়া নিয়া গিয়াছে’।

মো. অলিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “চুরির ঘটনায় আমরা মামলা করেছি, এখন তদন্ত কাজ চলছে।“

চুরির সময় নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করলেও সন্দেহভাজনের তালিকায় তাদের নাম না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এড়িয়ে যান ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহ।

এ ছাড়া ওই রাতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সম্পর্কে এবং সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘আমি কিছু জানি না’ বলে কল কেটে দেন মামলার বাদী।

ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় গত ১৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫৬০-৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। এর মধ্যে সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে এবং বাকিটা খুলনা অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো।

এর পরের দিন চুরির ঘটনাটি ঘটে উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, কেমিস্ট আব্দুল মালেক ল্যাব বন্ধ করার সময় টেস্টিং যন্ত্রটি টেবিলের উপরেই ছিলো। আব্দুল মালেক চলে যাওয়ার আগে তালার চাবি ল্যাব-১ এর মুসা পারভেজকে দিয়ে ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. সাদ্দাম হোসেন ও তানভীর রহমানকে দিতে বলেন। মুসা পারভেজ তাদের চাবি দেন।

রাত ১০টায় সে স্থানে দায়িত্ব পালন করতে আসেন মো. জাকারিয়া আল রাজী এবং মাসুম বিল্লাহ। তারা ১৫ জানুয়ারি সকাল ৭টায় দায়িত্ব শেষ করেন। এ সময় মো. সাদ্দাম হোসেন এবং মো. মাসুম বিল্লাহ দায়িত্ব নেন। সকাল ৯টার দিকে রুম ক্লিনার আব্দুল নোমান ল্যাব-২ পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন টেবিলে যন্ত্রটি নেই। তারপর তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান।

এরই দায়ের মরা মামলায় যন্ত্রটির মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৪৭ লাখ টাকা।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জিনিসপত্র চুরি যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। বারবার সেখানে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। গত ১৫ মাসে র‌্যাব ও আনসার ব্যাটালিয়নের অভিযানে এই কেন্দ্র থেকে চুরি যাওয়া কোটি টাকা মূল্যের মালামাল উদ্ধার হয়েছে। আটক করা হয় ৫৪ জনকে।

এসব চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাধারণত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এবার সংরক্ষিত এলাকা ও কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য থেকে দামী যন্ত্র খোয়া যাওয়ার পর কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

চুরির বিষয়ে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা এনবি নিউজকে  বলেন, “কয়লা পরীক্ষার যন্ত্র সাধারণ মানুষের কোনো কাজে লাগার কথা নয়। তাই ছিঁচকে চোর বা কোনো শ্রমিকের এটা চুরি করারও কথা না। বড় কোনো চক্র এবং কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কেউ এতে জড়িত থাকতে পারে।”

“ল্যাব এলাকায় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার জন্য লোক থাকা সত্ত্বেও মামলায় কারো নাম না দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায় এড়ানোর চেষ্টা।”

বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটির নিরাপত্তার জন্য ১৫০ জন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য, ৩০ সাধারণ আনসার, ১৭ জন পুলিশ সদস্য ছাড়াও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভেল-এর নিজস্ব সেন্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিস এবং জেরিন সিকিউরিটি সার্ভিসের ৯৬ জন কর্মী রয়েছে।

রামপাল উপজেলার সাপমারী কাটাখালী মৌজায় অধিগ্রহণ করা ৯১৫ একর জায়গার মধ্যে ৪৫০ একর জায়গায় সীমানা প্রাচীর রয়েছে। এই প্রাচীরে মোট নয়টি গেট। এর বাইরে প্রায় দুই কিলোমিটার নদীর সীমানাসহ বাকি জায়গা অরক্ষিতই বলা চলে।

২০১০ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাতীয় তাপ বিদ্যুৎ করপোরেশনের (এনটিপিসি) মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে সমঝোতা হয়। এর দুই বছর পর ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি এনটিপিসির সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে চুক্তি হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। তবে শুরু থেকেই সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন পরিবেশবাদীরা।

বিআইএফপিসিএল কোম্পানির অধীনে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট মূলত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় এক হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।

গত বছরের ১১ জুলাই বয়লার স্টিম ব্লোয়িং স্থাপন করা হয়। এক মাস পরে ১৪ আগস্ট টারবাইন-এ স্টিম ডাম্পিং এবং একদিন পরে ১৫ আগস্ট জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ (ট্রান্সমিশন) শুরু করা হয়।

৬ সেপ্টেম্বর ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে কয়লাচালিত মৈত্রী পাওয়ার প্ল্যান্টের ইউনিট-১ এর উদ্বোধন করেন।

১৭ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে বাগেরহাটের কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ৩:১৭ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৬:৩৫ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৮:০০ অপরাহ্ণ