• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

এলডিসি পরবর্তী সময়ের জন্য এখনই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন : প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ সংবাদটির পাঠক ৭ জন

এনবি নিউজ : স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং অসাধারণ কৃতিত্ব হিসেবে উল্লেখ করে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশনের (এসডিসি) মহাপরিচালক প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেছেন, বাংলাদেশের এখন এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, নির্দিষ্ট কিছু বাজারে এখন তাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

১৯৯৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ক্রীড়াবিদ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধিত্বকারী ড্যানজি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—এ অগ্রযাত্রাটা হতে হবে মসৃণ, স্থায়িত্ব সম্পন্ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, যাতে করে কেউ পিছিয়ে না পড়ে।’

প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বাজারের ব্যাপারে পূর্বানুমানের সক্ষমতা বাড়ানো এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দেন।

ড্যানজি বলেন, বর্তমানে করোনার কারণে সৃষ্ট নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে গোটা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে। এর ফলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং বৈষম্য আরও বেড়েছে।

প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি আরও বলেন, ‘এ দুরবস্থায় আমরা আমাদের নতুন সহযোগিতা কর্মসূচির আওতায় দারিদ্র্য নিরসন এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব।’

ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে ড্যানজি বলেন, সুইজারল্যান্ড তার উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদারত্ব’ অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, ‘আমার সফরে আমি এ দেশে অনেকগুলো ইতিবাচক বিষয় দেখেছি, যেগুলোর ফলে সুইজারল্যান্ড এ দেশের সঙ্গে কাজ করা এবং সে সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ আলোচনা ও মতবিনিময়ে আগ্রহী করবে।’

এসডিসি’র মহাপরিচালক বলেন, এ সমস্ত উপাদান কেন্দ্রীয় এবং তারা এটি তৈরি করতে চাইবে। তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন একসঙ্গে এ পরবর্তী পদক্ষেপ নিই এবং সবার জন্য একটি সমৃদ্ধ ও স্থায়িত্বমূলক ভবিষ্যৎ তৈরিতে কাজ করি।’

জলবায়ু পরিবর্তনকে আরেকটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, প্রয়োজনীয় অভিযোজন ও প্রশমন ব্যবস্থার অর্থায়নের জন্য সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।

ড্যানজি বলেন, গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল টেকসই ও স্বচ্ছ জলবায়ু অর্থায়ন।

বাংলাদেশের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের সম্পর্ককে ‘চমৎকার’ উল্লেখ করে প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, দুদেশ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে একটি দৃঢ় ও অগ্রগামী অংশীদারত্ব লালন করছে।

ড্যানজি বলেন, ২০২২ সালে আমাদের দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপন করবে। আমার বাংলাদেশ সফরের একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এ বিশেষ অনুষ্ঠানের উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এ মাইলফলকটি আমাদের এ দেশের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করতে এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। দুই দেশ তাদের সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে এমন বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রের কথা বলেছেন তিনি ।

উদাহরণস্বরূপ প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়—জাতিসংঘের এজেন্ডা ২০৩০-এর কথা উল্লেখ করেন। জাতিসংঘের এজেন্ডা ২০৩০ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড কাউকে পিছিয়ে না রেখে একটি সমান্তরাল বিশ্ব গঠনের অভিন্ন প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, ‘সে লক্ষ্যে, আমার সফরটি সুইজারল্যান্ড-বাংলাদেশ সহযোগিতা কর্মসূচি ২০২২-২৫’র সূচনা করছে।’

এসডিসি’র মহাপরিচালক উল্লেখ করেন, সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, যেহেতু আমার দেশ ২০২৩-২৫ সালের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি অস্থায়ী আসনের প্রার্থী, আমি নিশ্চিত যে শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার জন্য এটি একটি খুব ভালো উপলক্ষ্য হবে।

ড্যানজি তাঁর সফরকালে কক্সবাজারে দুদিন কাটিয়েছেন এবং ২০১৭ সাল থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছেন।

প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, এ সংকটে আমরা ৪৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন সুইস দিয়ে অবদান রেখেছি। সুইজারল্যান্ড সবচেয়ে বেশি অর্থ সাহায্যকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং আমরা একটি স্থায়ী, ঐচ্ছিক, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্ভব না হওয়া পর্যন্ত শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ড্যানজি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সমাধানের প্রত্যাশা রাখা এবং সেইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ দেওয়া অপরিহার্য।

এক প্রশ্নের জবাবে প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী স্তম্ভ হলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

ড্যানজি বলেন, গত কয়েক দশকে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং মানবিক সহায়তায়র জন্য বাংলাদেশকে এরই মধ্যে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে সুইজারল্যান্ড।

প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, এটি আপনাদের দেশের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদারত্বের একটি প্রমাণ। আমি গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন ও মানবিক প্রকল্পে পরিদর্শন করেছি এবং আমি গর্বিত যে, সুইস-সমর্থিত প্রকল্পগুলো এ দেশে যথেষ্ট কার্যকর এবং এদেশে সেগুলোর প্রভাব রয়েছে।

বাজারের সুযোগ এবং প্রাইভেট সেক্টরের নেতৃত্বে-তথাকথিত ‘বাজার-নেতৃত্বাধীন পদ্ধতি’ বিবেচনা করে প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, তাঁদের প্রকল্পগুলো দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে উপকৃত করে; যাদের মূলত এ সহায়তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দুটি উদাহরণ দিয়ে ড্যানজি বলেন, ২০১৮-২০২১ সালের মধ্যে তাঁদের সহযোগিতায় আনুমানিক ১৪ লাখ কৃষক, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা তাঁদের নতুন বা উন্নত বাজার ব্যবস্থা, সামাজিক ও দক্ষতা উন্নয়ন পরিষেবাগুলো ব্যবহার করেছে।

প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, এ ছাড়া ২০ লাখের বেশি লোককে নিরাপদ অভিবাসন নীতি মেনে চলা এবং অভিবাসী অধিকারের বিষয়ে জানানো হয়েছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগতিার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো—এটি সুবিধাভোগীদের ক্ষমতায়নে অবদান রাখে এবং তাদের নিজেদের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, যা তাদের জীবন বদলে দিতে পারে।

অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, তাঁরা ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্য নতুন সহযোগিতা কর্মসূচি চালু করেছেন।

এসডিসি’র মহাপরিচালক বলেন, এটি সুইস অগ্রাধিকারমূলক পররাষ্ট্র নীতি এবং তাঁর দেশের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কৌশলের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। এটি এজেন্ডা ২০৩০ এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের সামগ্রিক লক্ষ্য হলো—একটি এলডিসি উত্তরণকে টেকসই করতে সহায়তা করা এবং আরও সমৃদ্ধ, ন্যায্য ও স্থিতিস্থাপকভাবে সমাজকে উন্নত করা এবং সমাজের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে অবদান রাখা।

আগামী চার বছরে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সুইজারল্যান্ড প্রায় ১১৯ মিলিয়ন সুইস বা এক হাজার ১০০ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করবে।

প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, এর ফলে কার্যকর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সহযোগিতা বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে রয়েছে-বাজার বিশ্লেষণ পদ্ধতি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার দক্ষতা উন্নয়ন প্রভৃতি থাকবে।

ড্যানজি আরও বলেন, এসডিজি অবশ্যই আমাদের কার্যক্রমের মূলে রয়েছে, যদিও মহামারি পরবর্তী সময়ে এটির সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের বেশি পছন্দ হলো—এসডিজি ১৬, যা শান্তি, ন্যায়বিচার এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তৈরির দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

‘প্রকৃতপক্ষে, শান্তি, ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তি ছাড়া দারিদ্র্যের অবসান, শিক্ষা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মতো লক্ষ্যগুলো অর্জন করা কঠিন, এমনকি কখনও কখনও অসম্ভব হয়ে যায় বলে অভিমত প্রকাশ করেন ড্যানজি ।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ

প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকার আশা করছি আমরা।

ড্যানজি বলেন, সুইস প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমে বাংলাদেশ, উদ্‌ভাবনী ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক পরিসেবা সরবরাহ করার দক্ষতা, জ্ঞান ও সক্ষমতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ নিতে পারে। এর ফলে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে এবং ভবিষ্যতে সবার জন্য ভালো ফলাফল তৈরি করবে।

প্যাট্রিসিয়া ড্যানজি বলেন, ‘আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আমি দেখছি—এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের কর্মসূচি কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। আমি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দেখার সুযোগ পেয়েছি যেখানে সুইস সহায়তার প্রভাবে শ্রমিকরা উপকৃত হচ্ছে এবং কর্মক্ষেত্রের পরিবেশেরও উন্নয়ন হচ্ছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে অবদান রাখবে।

ড্যানজি বলেন, আমি আগেই বলেছি এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়া শেষ করার পর বাংলাদেশও বিশেষ ছাড়পত্র হারাতে পারে। তাই, পুঁজিবাজারের বিকাশ ও প্রভাব বাড়ানোর মতো পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে বেসরকারি খাত উন্নয়নে নজর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

এ গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকীর জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত ড্যানজি বলেন, গত পাঁচ দশকে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা পারস্পরিকভাবে লাভজনক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৪:১১ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ৩:২৩ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৬:২৩ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৭:৪৩ অপরাহ্ণ