• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

করোনায় নাজেহাল নেপাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ৫ জুন, ২০২১ সংবাদটির পাঠক ০ জন

ডা: আব্দুস সালাম : নেপালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দৃশ্যমানভাবে কমে এসেছে। কিন্তু দেশটি মহামারিতে এখনো ভুগছে। এখনো হাসপাতালে শয্যার সংকট রয়েছে। আছে অক্সিজেনের সংকটও। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে লকডাউন খানিকটা শিথিল করা হলেও জনজীবন এখনো স্বাভাবিক হয়নি। নেপালের বিভিন্ন প্রদেশের নাগরিকদের কথায় এমন চিত্রই উঠে এসেছে।

নেপাল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করছে। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সেখানে। দেশটিতে করোনার প্রথম ঢেউ যখন সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছেছিল, তখন দৈনিক সংক্রমণ ছিল প্রায় ৬ হাজার। গত বছরের অক্টোবরে এই চিত্র দেখা দিয়েছিল নেপালে। অক্টোবরের শেষে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। মোট মৃত্যু ছিল ১ হাজার ৩০০–এর বেশি।

নেপালে ভারতের করোনার ধাক্কা | মাল্টিমিডিয়া | DW | 06.05.2021

এরপর থেকে নেপালে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত ১১ মে দেশটিতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এদিন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৯ হাজারের বেশি। আর সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ১৯ মে। সেদিন মারা যান ২৪৬ জন।

করোনার সার্বক্ষণিক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুসারে, দেশটিতে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মোট সংক্রমণ ছিল ৫ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি। এ পর্যন্ত মারা গেছেন সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষ। আর সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি রোগী। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে তার থেকে প্রকৃত সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা প্রয়োজন সেই পরিমাণ পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। আর কয়েক সপ্তাহ ধরে নেপালে সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশের ওপরে।

গতকাল শুক্রবার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে সাড়ে চার হাজারের বেশি। আর মারা যান ১০১ জন। সংক্রমণ ও মৃত্যু তুলনামূলক কমে এলেও হাসপাতালের চিত্রে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। এ প্রসঙ্গে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর কালোপুল এলাকার বাসিন্দা ও চিত্রশিল্পী সৌরগঙ্গা দর্শনধারী গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর থেকে কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। ফলে ঘরেই থাকতে হচ্ছে। আমার বাসাটা মূল সড়কের পাশে। এখান থেকে গাড়ির শব্দ শোনা যায়। কদিন আগেও যে পরিমাণ অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ এখান থেকে শোনা যেত, সেই পরিমাণ শব্দ আর শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু হাসপাতালে যেসব সংকট ছিল সেগুলো রয়েই গেছে।’

সৌরগঙ্গা বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডারের যে ঘাটতি ছিল, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ফলে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে করোনার রোগীদের পরিবারগুলো হিমশিম খাচ্ছে।

Nepal COVID-19 tally nears 29,000 as country reports 681 fresh cases- The New Indian Express

নেপালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য নেপালের প্রস্তুতি ছিল না। করোনার প্রথম ঢেউ যখন আঘাত হানে তখন প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরেছিলেন। ওই শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। কিন্তু এবার তা করতে দেরি হয়ে গেছে। এর জন্য গণমাধ্যমটি দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছে।

সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পার্লামেন্টে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংশ্লিষ্ট অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। যেমন: এক সপ্তাহ ধরে নেপাল ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, দেশটিতে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় আটকে যেতে পারে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় নেপালের করনালি প্রদেশের সুরখেত জেলার মেহেলকুনা হাসপাতালের চিকিৎসক বিনোদ যাদবের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, হাসপাতালে যে পরিমাণ শয্যা রয়েছে, সবগুলোতে রোগী আছে। এরপর যদি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়, তবে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এ ছাড়া করোনায় যাঁদের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাঁদের চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজধানীতে। আশপাশের হাসপাতালের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ফাঁকা নেই। অক্সিজেনেরও সংকট রয়েছে।

অক্সিজেনের সংকট প্রসঙ্গে নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সমীর কুমার অধিকারী যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনবিসিকে বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংকটের মুখে পড়েছে। অক্সিজেনের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। রয়েছে টিকার সংকটও।’

নেপালের বাগমতি প্রদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় সেখানকার হেটোডা শহরের বাসিন্দা ও পেশায় প্রকৌশলী মুকেশ জেশওয়ালের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোনো হাসপাতালে শয্যা থাকলে নেই অক্সিজেনের ব্যবস্থা। আবার কোথাও অক্সিজেন আছে, তো শয্যা নেই। সব সুযোগ-সুবিধা আছে এমন হাসপাতালের সংখ্যা অনেক কম। অনেকে চেষ্টা–তদবির করে হয়তো হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা করতে পারছেন, কিন্তু সেখানে ভর্তি হতে অগ্রিম এক লাখ রুপি পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। মুকেশ বলেন, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, রোগী হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যাচ্ছেন।

করোনায় নেপালের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেমন ভেঙে পড়েছে, তেমনি ভেঙে পড়েছে অর্থনৈতিক অবস্থাও। কারণ, দেশটির অন্যতম আয়ের উৎস পর্যটন খাত একেবারে ভেঙে পড়েছে। নেপালের সঙ্গে বিভিন্ন দেশ ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। হিমালয়ান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ফ্লাইট বন্ধ থাকায় পর্যটকেরা নেপালে যেতে পারছেন না। উল্টো যেসব পর্বতারোহীরা দেশটিতে গিয়েছেন, সেখান থেকে ফিরতে গিয়ে তাঁরা বিপাকে পড়ছেন।

নেপালের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, দেশটির আরেকটি আয়ের উৎস রেমিট্যান্স। কিন্তু কোভিডের কারণে লাখো প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। ফলে রেমিট্যান্স কমে গেছে।

অর্থাৎ করোনা মহামারিতে নেপালের নাজেহাল অবস্থার রাতারাতি পরিবর্তন অসম্ভব। এরই মধ্যে বিভিন্ন উন্নত দেশের কাছে করোনার টিকা চাইছে নেপাল। আপাতত টিকাতেই সমাধান খুঁজতে চাইছে দেশটি। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনার দুর্দশা থেকে মুক্ত হতে চাইলে নেপালের রাজনৈতিক অচলাবস্থারও পরিবর্তন জরুরি। তখনই হয়তো মহামারির মোকাবিলায় শক্তিশালী অবস্থানে যেতে পারবে দেশটি।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

নামাজের সময় সূচি

    Dhaka, Bangladesh
    রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
    ওয়াক্তসময়
    সুবহে সাদিকভোর ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ
    সূর্যোদয়ভোর ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ
    যোহরদুপুর ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
    আছরবিকাল ৩:১৭ অপরাহ্ণ
    মাগরিবসন্ধ্যা ৬:৩৫ অপরাহ্ণ
    এশা রাত ৮:০০ অপরাহ্ণ